ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় পারিবারিক কলহের জেরে শ্বশুরবাড়ির ৪০-৫০ জন মানুষ মোটরসাইকেলে এসে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সিফাত আহমেদ বাবু (২৪) নামে একজনকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রতন মিয়া নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সিফাত আহমেদ বাবু শিবপুর গ্রামের হাতেম আলীর একমাত্র ছেলে। তিনি ঢাকার সাভারে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করতেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় এক বছর আগে শিবপুর গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে সিফাতের সঙ্গে একই উপজেলার কেশবপুর গ্রামের মালেক মিয়ার মেয়ে সাথীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো। চাকরির কারণে সিফাত বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকতো। আর তার স্ত্রী বেশির ভাগ সময় তার বাবার বাড়ি কেশবপুরেই থাকতো। গত ১৬ই ডিসেম্বর সিফাত ছুটিতে এসে তার স্ত্রীকে আনতে গেলে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে আসতে দেয়নি। পরে সিফাতের মা নিলুফা তার ছেলের বউকে আনতে গেলে তাকে অনেক কটু কথা শোনায়। পরে সিফাতের মায়ের সঙ্গে সাথী আক্তার তার শ্বশুরবাড়িতে আসে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় সাথী আক্তার তার বাপের বাড়ির লোকজনকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে তার বাবার বাড়ি থেকে ৪০-৫০ জন লোক এসে সিফাতের বাড়িতে হামলা চালায়। ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিলে সিফাতের বাবা ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারপর সেখান থেকে পুলিশ ফিরে আসার ১০ মিনিট পর ময়মনসিংহ-জামালপুর সড়কের কামনা অটো রাইস মিলের পেছনের এক পতিত ক্ষেতে স্থানীয়রা সিফাতকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তার মৃত্যু হয়। নিহত সিফাতের মা নিলুফা বলেন, আমার একটি মাত্র ছেলে। ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেললো। সিফাতের শ্বশুরবাড়ি থেকে লোক এসে আমার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় আমরা ভয়ে বাইরের গেইট লাগিয়ে দেই। পরে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সিফাতের স্ত্রী সাথী গেইট খুলে দিলে তারা অতর্কিত হামলা চালায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, এশার নামাজের সময় সিফাতের কাকা আমাকে ফোনে জানায় কেশবপুর থেকে অনেক লোকজন এসে তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। নামাজ শেষে আমি এসে দেখি পুলিশ। পরে পুলিশ সেখান থেকে লোকজন সরিয়ে চলে যায়। তার প্রায় ১০ মিনিট পরে খবর পাই রাইস মিলের পেছনে সিফাতের অচেতন দেহ পড়ে আছে। সেখান থেকে মেডিকেলে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। মুক্তাগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রাজিব আহমেদ বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার পর রতন মিয়া নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
