এপস্টেইন নথি প্রকাশে ক্লিনটনের নাম বেশি, ট্রাম্পের উল্লেখ খুবই সীমিত

এপস্টেইন নথি প্রকাশে ক্লিনটনের নাম বেশি, ট্রাম্পের উল্লেখ খুবই সীমিত

ফন্ট সাইজ:
100%

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয় (ডিওজে) প্রয়াত অর্থলগ্নিকারী ও দণ্ডিত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টেইন সংক্রান্ত লক্ষাধিক পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করেছে। এসব নথিতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের উল্লেখ খুবই সীমিত হলেও ডেমোক্রে?ট দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের নাম ও ছবি ব্যাপকভাবে উঠে এসেছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, এই নথি প্রকাশ করা হয়েছে নভেম্বরে কংগ্রেসে বিপুল সমর্থনে পাস হওয়া একটি আইনের বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য। সেখানে সব এপস্টেইন সংক্রান্ত ফাইল প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়। অথচ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কয়েক মাস ধরে এসব নথি গোপন রাখার চেষ্টা করে আসছিলেন। বহু বছর ধরে ট্রাম্প নিজেই এপস্টেইনকে ঘিরে নানা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার করলেও, জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এই ইস্যুই তার জন্য রাজনৈতিক দায়ে পরিণত হয়েছে। নতুন করে প্রকাশিত নথিগুলোর প্রকৃত গুরুত্ব এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। কারণ এপস্টেইনের ২০১৯ সালে কারাগারে মৃত্যুর পর থেকেই তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বহু নথি ধাপে ধাপে প্রকাশ পেয়েছে। রয়টার্স বর্তমানে এসব নথি পর্যালোচনা করছে। প্রকাশিত নথির মধ্যে রয়েছে এপস্টেইনকে ঘিরে একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তসংক্রান্ত প্রমাণ এবং বিল ক্লিনটনের ছবি, যাকে দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্পপন্থি রিপাবলিকানরা আক্রমণের লক্ষ্য বানিয়ে আসছেন। তবে এসব নথিতে ট্রাম্পের ছবি বা তার নামসংবলিত দলিল খুব কমই দেখা গেছে, যদিও ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকের শুরুতে ট্রাম্প ও এপস্টেইনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল বহুল আলোচিত।
ট্রাম্পের নাম অনুপস্থিত থাকা বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। কারণ আগের এপস্টেইন সংক্রান্ত প্রকাশনায় বছরের পর বছর ধরে ট্রাম্পের ছবি ও নথি ধীরে ধীরে সামনে এসেছে। ফেব্রুয়ারিতে বিচার বিভাগ যে প্রথম দফার নথি প্রকাশ করে, তাতে এপস্টেইনের ব্যক্তিগত বিমানের যাত্রী তালিকায় ট্রাম্পের নাম ছিল। এছাড়া এপস্টেইনের একটি যোগাযোগ বিষয়ক ডায়েরিতেও ট্রাম্প এবং তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের নাম ছিল, যা এপস্টেইনের সহযোগী ও সাবেক প্রেমিকা গিসলেন ম্যাক্সওয়েলের বিচারের সময় প্রকাশ্যে আসে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল টড ব্ল্যাঞ্চ জানিয়েছেন, এটি কেবল প্রাথমিক দফা। পরে আরও নথি প্রকাশ করা হবে। ফলে ভবিষ্যতে প্রকাশিত নথিতে ট্রাম্পের ভূমিকা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। গত মাসে ট্রাম্প আইন মন্ত্রণালয়কে ক্লিনটনের সঙ্গে এপস্টেইনের সম্পর্ক তদন্তের নির্দেশ দেন। যা সমালোচকদের মতে নিজের সঙ্গে এপস্টেইনের সম্পর্ক থেকে নজর ঘোরানোর কৌশল। শুক্রবার প্রকাশিত একটি ছবিতে বিল ক্লিনটনকে একটি সুইমিং পুলে গিসলেন ম্যাক্সওয়েল ও আরেকজন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা যায়, যদিও ওই ব্যক্তির মুখ আড়াল করা। ক্লিনটন তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি। তিনি এর আগে এপস্টেইনের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশার জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেন এবং দাবি করেন, তিনি কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতেন না।
আইন মন্ত্রণালয় নথি প্রকাশের ওয়েবপেজে একটি সতর্কবার্তাও যুক্ত করেছে। সেখানে বলা হয়েছে- ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখতে সব যুক্তিসংগত চেষ্টা করা হয়েছে। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু তথ্য প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। কংগ্রেসে পাঠানো এক চিঠিতে ব্ল্যাঞ্চ জানান, সম্ভাব্য প্রকাশের জন্য বাকি নথিগুলো পর্যালোচনা করতে আইন মন্ত্রণালয়ের আরও প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। তিনি আরও জানান, এসব নথিতে ভুক্তভোগী বা তাদের আত্মীয় হিসেবে ১২০০-এর বেশি নাম শনাক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে দাবি করে, এই নথি প্রকাশ এপস্টেইনের ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচারের প্রতি প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও প্রতিশ্রুতির প্রমাণ। একই সঙ্গে আগের ডেমোক্রে?ট প্রশাসনগুলোকে একই কাজ না করার জন্য সমালোচনা করা হয়। তবে ওই বিবৃতিতে এ বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে যে কংগ্রেস প্রশাসনকে বাধ্য না করলে এসব নথি প্রকাশই হতো না। কারণ ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ বছরের শুরুতে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আর কোনো এপস্টেইন নথি প্রকাশ করা হবে না। ডেমোক্রে?টরা সঙ্গে সঙ্গেই প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, সব নথি প্রকাশ করা হয়নি। ডেমোক্রে?টিক সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার এক বিবৃতিতে বলেন, আইন মন্ত্রণালয় যে কঠোরভাবে সম্পাদিত (রেডাক্টেড) নথিগুলো প্রকাশ করেছে, তা পুরো প্রমাণভাণ্ডারের মাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশ। ডেমোক্রে?ট সিনেটর অ্যাডাম শিফ নিজেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা একটি ফৌজদারি মর্টগেজ জালিয়াতি তদন্তের মুখে। তিনি বলেন, তারা চাইলে এই মুহূর্তের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকতে পারত। কিন্তু তারা প্রস্তুত নয় অথবা ইচ্ছাকৃতভাবেই নথি আটকে রেখেছে।

কোন মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্যকারী হোন!

মন্তব্য করুন