ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যু সংবাদ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। বিবিসি, আল জাজিরা, বার্তা সংস্থা রয়টার্স, টিআরটি ওয়ার্ল্ড থেকে শুরু করে ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ওসমান বিন হাদির মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি গণমাধ্যমের শিরোনাম প্রায় একই। এসব সংবাদমাধ্যমের প্রায় প্রতিটি প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা ও আগুনের খবর হাইলাইট করেছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার কথাও উল্লেখ করেছে তারা।
বৃটিশ গণমাধ্যম বিবিসি’র শিরোনাম- তরুণ নেতার মৃত্যুর খবরে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। এতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া এক তরুণ নেতা ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গত সপ্তাহে নামাজ শেষে বের হওয়ার পর দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন তিনি। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়া হলে বৃহস্পতিবার সেখানে মারা যান। জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরের দিনই তাকে গুলি করা হয়। বিবিসি’র খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি মুহূর্তের মধ্যেই সহিংস হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে কিছু মানুষ দেশের শীর্ষস্থানীয় দু’টি জাতীয় দৈনিক- প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে আগুন দেয় ও ভাঙচুর চালায়।
রয়টার্সের শিরোনাম- ছাত্রনেতার মৃত্যু ঘিরে অস্থিরতা, উত্তাল বাংলাদেশ। খবরে বলা হয়, তরুণ নেতা শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাংলাদেশ জুড়ে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন করে অস্থিরতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রয়টার্সও প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ভবনে চালানো নৈরাজ্যের কথা উল্লেখ করেছে। বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষুব্ধ জনতার ব্যানারে একদল মানুষ দেশের সর্বাধিক প্রচারিত জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালাচ্ছে। সেখানে তারা হাদির নামে আবেগ ঘন স্লোগান দেন। এই সহিংসতা দমনে পুলিশের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কথাও লিখেছে বার্তা সংস্থাটি।
আল জাজিরার শিরোনাম ছিল সাদামাটা। তারা লিখেছে- সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রনেতার ?মৃত্যু। খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া অন্যতম নেতা শরীফ ওসমান বিন হাদি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। হত্যাচেষ্টা থেকে বাঁচাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও হাদি আঘাতের কাছে পরাজিত হয়েছেন। ওই খবরে আরও বলা হয়, ৩২ বছর বয়সী হাদি ছিলেন ছাত্র আন্দোলন থেকে জন্ম নেয়া সংগঠন ‘ইনকিলাব মঞ্চে’র জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের মিত্র প্রতিবেশী দেশ ভারতের একজন কট্টর সমালোচক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের শিরোনাম- তরুণ নেতাকে হত্যা, বাংলাদেশে বিক্ষোভ। খবরে বলা হয়, তরুণ নেতা শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর রাজধানী ঢাকায় হাজারো বিক্ষোভকারীর ঢল নামে। বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাদি। তিনি চব্বিশের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। গত সপ্তাহে রাজধানীতে তাকে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। হাদির মৃত্যুতে ক্ষোভে ফেটে পড়া জনতা তার নামে আবেগঘন স্লোগান দেয়। পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দায়ীদের দ্রুত বিচার ও জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডের শিরোনাম- হাদির মৃত্যুতে উত্তপ্ত বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন। খবরে বলা হয়েছে, শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিত এই নেতার মৃত্যুতে শাহবাগে জড়ো হন হাজারো মানুষ। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ একটি দল দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলোর কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ের ভেতরে তখন কয়েকজন আটকা পড়ে যান। বিক্ষোভকারীরা প্রথমে ভবন দু’টিতে ভাঙচুর চালিয়ে পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে বলা হয়েছে, দুইটি ভবনের বাইরে সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) মোতায়েন করা হলেও তারা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ডেইলি স্টার ভবনের বাইরে দমকল বাহিনী এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে অংশ নেয়।
এনডিটিভি’র শিরোনাম- গুলিবিদ্ধ হওয়ার এক সপ্তাহ পর ছাত্রনেতা হাদির মৃত্যু। খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির নেতা শরীফ ওসমান হাদি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। হত্যাচেষ্টায় গুরুতর আহত হওয়ার পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও হাদি আঘাতের কাছে পরাজিত হয়েছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হাদির মৃতদেহ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ঢাকাকে সহায়তা করছে সিঙ্গাপুর। গত সপ্তাহে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিশেষ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
জিওনিউজের শিরোনাম- সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে মারা গেছেন বাংলাদেশের ছাত্রনেতা হাদি। খবরে বলা হয়, হত্যাচেষ্টার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়ার পর মারা গেছেন চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের অন্যতম তরুণ নেতা শরীফ ওসমান বিন হাদি। তার প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব মঞ্চ ফেসবুকে হাদির মৃত্যুর খবর জানিয়ে লিখেছে, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আল্লাহ মহান বিপ্লবী ওসমান বিন হাদিকে শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।
