ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনার খবর আসার পর থেকে উত্তপ্ত হতে শুরু করে ঢাকাসহ সারা দেশ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা বিক্ষোভ অবরোধ করেছেন বিভিন্ন স্থানে। গতকালও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অবরোধ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এবং গতকালও বিভিন্ন স্থানে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ জনতার নামে এই হামলা ও ভাঙচুরের পেছনে কোনো পক্ষের উদ্দেশ্যে রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব ঘটনা থেকে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।
বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষোভকারীরা প্রথম সারির দু’টি গণমাধ্যম প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে করে এই দু’টি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অগ্নিসংযোগের কারণে গুরুত্বপূর্ণ নথি ও আসবাবপত্র পুড়ে যায়। দু’টি ভবনের ছাদেও আটকা পড়েন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে তাদেরকে উদ্ধার করে এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া ধানমণ্ডি এলাকার ছায়ানটেও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে ওই রাত থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যদিও তাদের সামনেই বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যাপক হামলা চালায়। ঢাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, আনসার ও বিজিবি সদস্যদের নামানো হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। বাড়ানো হয় দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বাড়ানো হয় নিরাপত্তা। ডিপ্লোম্যাটিক জোনেও অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে যায় পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে অবস্থান করবেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে চাহিদার প্রেক্ষিতে আরও বেশিসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হবে। সরজমিন দেখা যায়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনের সামনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সদস্যরা ভবনটির নিরাপত্তা দিচ্ছিলেন। ছায়ানটের সামনেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক উপস্থিতি দেখা গেলেও ধানমণ্ডি-৩২ নম্বর কিংবা শাহবাগ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। ছায়ানটের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ধানমণ্ডি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খলিলুর রহমান বলেন, সকাল থেকে আমরা এখানে দায়িত্বে আছি। সকাল থেকে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।
এদিকে, দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। গতকাল তিনি এই ভবন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের আশপাশে ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা শোনেন। তবে পরিদর্শনকালে এ বিষয়ে আইজিপিকে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। এছাড়া প্রথম আলোর ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী। গতকাল বিকাল পৌনে ৫টার দিকে এ ভবন পরিদর্শন করেন তিনি। পরিদর্শনকালে পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের আশপাশে ঘুরে দেখেন। দায়িত্বরত অফিসার থেকে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা শোনেন এবং সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকার পরামর্শ দেন।
ওদিকে, শহীদ শরীফ ওসমান হাদির মরদেহ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গতকাল সন্ধ্যায় বাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিমঘরকে কেন্দ্র করে বিজিবি’র নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করছেন। এর আগে হাদির মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে আসাকে ঘিরে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার সদস্য।
ডিপ্লোম্যাটিক জোনে নিরাপত্তা জোরদার: শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট নিরাপত্তাঝুঁকি মোকাবিলায় রাজধানীর কূটনৈতিক মিশন এবং এলাকাগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বিজিবি’র সদস্যদের পাশাপাশি এসব এলাকায় কাজ করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় এবং আশপাশে অবস্থিত বিভিন্ন মিশনে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাহিনীগুলোর সদস্যদের কাজ করতে দেখা গেছে। পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির পাশাপাশি ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ভারত, তুরস্ক, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দূতাবাস ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র সদস্যরা। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেখা গেছে এপিবিএন এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও।
